প্রকাশিত: Sat, Jan 7, 2023 2:44 PM
আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 12:23 AM

বিচারককে অপমান করা সিস্টেমের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখানো

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতে কক্ষের অভ্যন্তরে হট্টগোল কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি দেশের আদালত কক্ষের অভ্যন্তরে এ ধরণের ঘটনা কারো কাম্য হতে পারে না। বিষয়টি আমি ৭১ টেলিভিশনের টকশোর মাধ্যমে জানতে পারি। প্রথমত বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ৭১ টেলিভিশনকে আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসা উচিৎ ছিল। আলোচনাটা যেভাবে হওয়া উচিত ছিল সেভাবে হয়নি, স্থানিও যে সাংবাদিককে আনা হল তিনি ঘটনার সময় সেখানে নিজেও উপস্থিত ছিলেন না।  টকশোটি দেখে মনে হল এখানে উপস্থাপকের আগে থেকেই তেমন একটা প্রস্তুতি ছিল না।   

টকশোতে উপস্থিত ব্যক্তিদের আলাপ-আলোচনার উপর ভিত্তি করে আমি বলবো, আইনজীবী সমিতির নেতার কথাগুলো কোন আইনের আওতায় পরে না। উনি বা উনারা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ করেছেন, আদালত কক্ষের অভ্যন্তরে কে থাকবে আর কে না থাকবে তার সিদ্ধান্ত নিবেন বিচারক। মামলা চলাকালীন সময়ে আদালত কক্ষের অভ্যন্তরে প্রধান কর্মকর্তা হলেন বিচারক। 

আদালত কক্ষের ভেতরে থাকবে পক্ষ বিপক্ষের উকিল, পাবলিক প্রসিকিউটার, আসামী আর বাদী। এছাড়া মামলার সাথে সম্পর্কিত সাক্ষীরা থাকতে পারবে। তবে সাক্ষীরা তখনই আদালত কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করবেন, যখন তাদের নাম ধরে ডাকা হবে। এখন প্রশ্ন হল ঐ সময় সমিতির আইনজীবীরা কেন আদালত কক্ষের ভেতরে ছিলেন? মামলায় দর্শক হিসেবে, না চলমান মামলার আইনজীবী হিসেবে? এই দুই কারণের উপর নির্ভর করে যদি তারা আদালত কক্ষে উপস্থিত হয়ে থাকেন তাহলে তাদের আগে থেকেই অনুমদন লাগবে। তাদের কি সেই অনুমতি ছিল?  

অন্যদিকে কোন বিচারক কিংবা আদালতের কোন কর্মকর্তার কাজের বিরুধে অভিযোগ থাকলে শুধু আইনজীবী কেন, দেশের প্রতিটি নাগরিক নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে পারে। ঠিক যেভাবে স্থানীও আইনজীবী সমিতির নেতা করেছেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ না নিলে প্রয়োজনে সরকারের আইনমন্ত্রনালয়ের দৃষ্টিতে আনা যেতে পারে। তারপরও কথা থাকে পরবর্তীতে আইন মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে সরকারের বিরুদ্ধে পর্যন্ত মামলা করা যেতে পারে। 

মামলার সাথে সম্পর্কিত না থেকে আদালত কক্ষে আইনজীবী সমিতির নেতারা যদি প্রবেশ করে থাকেন তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ আইনবিরোধী কাজ। এছাড়া আদালত কক্ষের অভ্যন্তরে তাদের কারনে যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে সেটাও হবে অপরাধ। এখন সত্যি সত্যি যদি তিনি বিচারককে আদালত থেকে নেমে যাওয়ার কথা বলে থাকেন এবং তা যদি প্রমানিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সরকারের আইন বিভাগ উপযুক্ত বেবস্থা গ্রহন করতে পারবে। দোস প্রমাণিত হলে আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। তবে সবকিছুই বাস্তব অবস্থা জেনে মূল্যায়ন করতে হবে।  

৭১ টকশো অনুসারে একজন বিচারককে যদি আদালত কক্ষের অভ্যন্তরে এভাবে নাজেহাল করা হয়ে থাকে তাহলে আমি মনে করি আদালতের প্রতি জনগনের আস্থা সন্মান উঠে যাবে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়য়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সম্ভবত আইনমন্ত্রী নিজেও ব্রাম্মনবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত একজন এমপি। সুতরাং বিলম্ব না করে দোষী ব্যক্তিকে যথা শিগ্রই আইনের আওয়াতায় নিয়ে আসা উচিৎ। আদালত কক্ষের অভ্যন্তরে বিচারক ছাড়া আসামী ও বাদী পক্ষের উকিল এবং পাবলিক প্রসিউকিউটার কারও কোন ক্ষমতা নেই। সেখানে আদালত কক্ষে  বিচারককে অপমান করা মানে দেশের পুরো জুডিশিয়াল সিস্টেমের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখানো।

লেখক: মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু। জুরি, স্টকহল্ম আপিল কোর্ট ও ইমিগ্রেশন কোর্ট।